চট্টগ্রাম দেশে ভ্রমণ

উদালিয়ায় চা বাগানে সবুজের হাতছানি

সুমন গোস্বামী

নারী শ্রমিকরা কাঁধের ঝুড়িতে জমা করছেন দুটি পাতা একটি কুড়ি। চারপাশে পাখির কলতান। লাল মাটির সবুজে ঢাকা ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা পথ চলে গেছে দিগন্তের পানে।

চা বাগান মানেই সবাই ভাবে এ চিত্র বুঝি সিলেটের। শুধু সিলেট নয়, চট্টগ্রামেও আছে চা বাগান। জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় চা বাগানের সংখ্যা মোট ১৭টি। চা শিল্পে সমৃদ্ধ আমাদের ফটিকছড়ি।

চা বাগান দেখতে তাই ঘুরে আসতে পারেন ঘরের কাছে নাজিরহাট-ফটিকছড়ি এলাকায়। এখানকার ছোট ছোট পাহাড়ি টিলায় উঁচু-নিচু সারি সারি সবুজ চা গাছ। সবুজ নিসর্গে হারিয়ে যেতে চায় মন।

প্রতিটি চা বাগানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন নিজস্ব রূপ। চিরাচরিত নিয়মে নারী চা শ্রমিকদের সবুজ চা সংগ্রহের মনোরম দৃশ্য আর তাদের ঘামঝরানো মেহনত হৃদয় ব্যাকুল করে তোলে।

নোয়াখালী থেকে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসু নাজিম আকবর ট্র্যাভেলিং চট্টগ্রামকে জানান, আমি জানতাম না নাজিরহাট-ফটিকছড়িতে এত চা বাগান রয়েছে। এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে অবাক লাগছে।

চট্টগ্রাম থেকে উদালিয়া চা বাগানে বেড়াতে আসা পযর্টক স্কুল শিক্ষক নারায়ণ জানান, মি সময় পেলে চা বাগানে ঘুরতে আসি। চা বাগান দৃশ্য আমাকে বার বার নিয়ে আসে এখানে।

প্রায় ২শ বছরে আগে বৃটিশ শাসন আমলে এই এলাকায় গড়ে ওঠে চা বাগান। পাহাড়ে ঘেরা ফটিকছড়িতে কর্ণফুলী চা বাগান, উদালিয়া চা বাগানসহ বেশ কয়েকটি বড় বাগান আছে। এইসব চা বাগানকে কেন্দ্র করে উত্তর চট্টগ্রামের বাণিজ্য কেন্দ্র নাজিরহাট পর্যন্ত রেল লাইন গড়ে উঠেছিলো। এছাড়াও উদালিয়া চা বাগানে রয়েছে বাংলাদেশ চা গবেষণাগা ইন্সটিটিউটের একটি কেন্দ্র।

এসব চা বাগানে বন বিড়াল, বন মোরগ, খরগোশ, অজগর সাপসহ অনেক দুলর্ভ প্রাণীর দেখা মিলতে পারে।

কর্ণফুলী চা বাগান ফটিকছড়ি থানা সদর থেকে ৫ কি.মি. পূর্বে লেলাং ইউনিয়নে। আর হাটহাজারী উপজেলার ১নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের থেকে ৪ কি.মি. দূরে উদালিয়া চা বাগান ।

ভুজপুর থানার পূর্ব পাশে হালদা নদীর পাড়ে কৈয়াছড়া চা বাগান। কর্ণফুলী চা বাগান ও কৈয়াছড়া চা বাগান দুইটি বৃহত্তর পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি সীমান্তবর্তী।

খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি ও সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রের পাশে নেপচুন চা বাগান। আর ও রয়েছে তারাখো রাবার বাগান গহিরা-হেয়াকো সড়কে এবং বিবিরহাটে রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগান।

চা বাগানের বাংলোগুলো শৌখিন ভাবেই তৈরি করা হয় । একটি ম্যানেজারের বাংলো এক একটি পর্যটন কেন্দ্রের মত। আর এই সব দেখতে প্রতিদিন দেশে বিভিন্ন জাগায় থেকে অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসে । তবে পর্যটক দলে ১০-১২ জন থাকলে ঘুরতে আর ভালো লাগবে। সরকারি ভাবে একটু পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে এইসব পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় হতো।

কিভাবে যাবেন ও থাকা খাওয়া: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে সেখান থেকে বাস বা ভাড়ার কার বা অন্য গাড়িতে করে যাওয়া যাবে এই চা বাগানগুলোতে। তবে উদালিয়া চা বাগানে ডেমু ট্রেনে চড়েও যাতে পারবেন।

ফটিকছড়িতে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের বিশাল বাংলো। চা বাগান থাকতে হলে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। ফটিকছড়ি সদর, নাজিরহাট বাজার, হাটহাজারী সদর ও হেয়াঁকোতে রয়েছে বেসরকারি আবাসিক হোটেল। এসব চা বাগান ঘুরে দিনে দিনেই ফিরতে পারবেন চট্টগ্রাম শহরে। #

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *