ট্যাভেলিং চট্টগ্রাম প্রতিবেদন :
ঈদের ছুটিতেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মেলে। প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়ানোর মত আনন্দ আর কিছুতেই নেই। হ্রদ, পাহাড় আর বন এই তিনের দেখা মিলবে কাপ্তাইতে।
রাঙামাটি জেলার পাহাড় ঘেরা কাপ্তাই উপজেলা প্রকৃতির সব সম্ভার নিয়ে সজ্জিত এক অপরূপ দর্শনীয় স্থান। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন জাতীয় উদ্যান হলো কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান। ১৮৭৩ সাল থেকে এখানে বনায়নের শুরু। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় লেক হলো কাপ্তাই লেক।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিলে কাপ্তাই লেকের সৃষ্টি হয়। সেই কেন্দ্রটিরও দেখা মিলবে কাপ্তাই বেড়াতে গেলে।
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে চড়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছাবেন। তারপর যেতে হবে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে কাপ্তাই যাওয়ার বাস ছাড়ে কিছুক্ষণ পরপর। পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই ঘণ্টার মত।
যে কোনো এক প্রান্ত থেকে ঘুরতে শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান দিয়ে শুরু হলো ঘোরা। প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার একরের বিশাল বনের ভেতর দল বেঁধে ঘোরার মজাই আলাদা। গাইডের সাহায্য নিলে সহজে ঘুরে দেখতে পারবেন আকর্ষণীয় স্পটগুলো।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের মূল ফটকে দুটো হাতির ভাস্কর্য স্বাগত জানায় অতিথিদের। ভাগ্য সদয় হলে বনের ভিতর দেখা মিলবে বন্যহাতি, বানর, হনুমান, উল্লুক, হরিণ, গুইসাপ আর বনবিড়ালের মত নানা প্রাণীর। চারপাশে বিশাল আকারের সব সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, শাল, গামারি, নাগেশ্বর, বৈলামসহ নাম না জানা কত গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
বনের ভেতর পায়ে হাঁটা পথ ধরে ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন নদী, হ্রদ, পাহাড়, ঝর্ণা আর পাহাড়ি ছড়া।
পাহাড় দেখা শেষে এবার যেতে পারেন জুম রেস্তোরায়। সেখানে পথের ধারেই লেক আর লেকের ওপাড়ে উঁচু উঁচু সব পাহাড়। হ্রদের জলে গোসল করতে নেমে পড়তে পারেন। আরও আছে কায়াকিং এর সুযোগ। বড় বজরা নৌকাও মিলবে ভাড়ায়। চাইলে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়তে পারেন হ্রদ দেখতে।
কায়াকিং আর গোসল সেরে খাবারের ব্যবস্থা আছে এখানকার রেস্তোরাগুলোতে। তারপর আবার বেরিয়ে পড়ুন। ততক্ষণে হয়ত আকাশে মেঘ জমেছে। যাত্রা পথের দক্ষিণ দিকের পাহাড়ের চূড়ায় আটকে থাকা মেঘের দেখা পাবেন। ঘন সবুজ পাহাড়ি বনের মাঝে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে যান। আশেপাশে আদিবাসীদের দেখা মিলবে।
অটোরিকশা বা নিজেদের গাড়িতে চড়ে পৌঁছে যাবেন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে অনুমতি লাগে। তবে কেন্দ্রে না ঢুকেই এর সৌন্দর্য্ উপভোগের সুযোগ আছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছেই মূল রাস্তার পাশে দেখতে পাবেন একটি পার্ক।
বিশাল সব গাছ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। শিশুদের জন্য দোলনা আছে, বসার আসন আছে আর আছে ক্যাফেটেরিয়া। বাম পাশে তাকালেই দেখতে পাবেন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশাল কাঠামো। যেখানে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে স্রোতস্বীনিকে। সেদিন যদি গেট খোলা হয় তবে দেখতে পাবেন কতটা তীব্র গতিতে নেমে আসছে পাহাড়ি জলধারা।
নদীর ওপারে দেখতে পাবেন বিশাল বন। নৌকা চলছে একটা দুটো করে। পাহাড় থেকে নামছে বাঁশের দীর্ঘ সারিতে বানানো ভেলা। পড়ন্ত বিকেলে এমন দৃশ্য দেখে স্বর্গীয় এক অনুভূতি জাগবে মনে।
চাইলে কাছাকাছি সুইডিশ পলিটেকনিক কলেজের সবুজ ক্যাম্পসটা ঘুরে দেখতে পারেন। ঘুরতে পারেন কাপ্তাই বাজারেও। অথবা দিনের মত ঘোরুঘুরি শেষ করে অনিন্দ্য সুন্দর কাপ্তাই-রাঙামাটি সড়ক ধরে চলে যেতে পারেন রাঙামাটি শহরে। #