আমিনুল ইসলাম মুন্না: আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সীতাকুন্ডে এসে এর রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন সেই বিখাত্য গান ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়…’।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলা, যদিও বা চট্টগ্রাম শহরের একটা অংশ এই উপজেলায়। পাহাড় আর সমুদ্র ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম এক তীর্থস্থানের নাম সীতাকুণ্ড।
পশ্চিমে সুবিশাল সমুদ্র, পূর্বে সারি সারি পাহাড়, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে প্রাচীন আদিনাথ মন্দির আর সবুজ পাহাড়ের মনোরম ঝর্না। সাগরের রুপালি জলরাশির পাশে পাহাড়গুলো ঝর্ণার সাজে নান্দনিকতায় পূর্ণ। সীতাকুণ্ড যেন পাহাড় সমুদ্র ঝর্ণার মেলবন্ধনের আরেক নাম।
ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে এই উপজেলা আদর্শ জায়গা। কারণ একসাথে বেশ কযেকটি স্থানে ঘুরে আসা যায়। তার বুক ছিঁড়ে বয়ে গেছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সেই সড়কের পূর্ব পাশে একটি স্থানের নাম ছোট দারোগারহাট।
এর পূর্বপাশে লবণাক্ষ পাহাড়। মেঠো পথ ধরে পায়ে হেঁটে গেলে এই পাহাড়ে দেখা মিলবে মনোরম কয়েকটি ঝর্না। এর একটির নাম সহস্র ধারা-২। আজ বলবো সে ঝর্ণার কথা।
ছোট দারোগার হাট থেকে পূর্ব পাশে লবণাক্ষ পাহাড়ে এই ঝর্নার অবস্থান। এই ঝর্নার পানি একটি সেচ প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম বারৈয়ারঢালা সেচ প্রকল্প। ছোট দারগার হাট হতে প্রায় দেড় কিলো মিটার দূরত্ব।
গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে আধা কিলোমিটারের মত বাকিটা পাহাড়ি মেঠো পথ তাই পায়ে হাঁটা ছাড় কোন উপায় নেই। উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ দু’পাশে সবুজ। তার মাঝে পথে বাঁধা হয়ে দাড়াবে পাহাড়ি ছড়া। আছে রবি শস্যের ছোট ছোট জমি। দেখা মিলবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কয়েকটি পরিবারের।
বর্ষার সময় এই পথ খুব পিচ্ছিল হয় তাই সাথে লাটি নিয়ে হাঁটা উচিত। সহস্র ধারা সেচ প্রকল্পের (বারৈয়ারঢালা সেচ প্রকল্প) বাঁধের কাছে পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় আধ ঘণ্টা। মূলত ঝর্নার পানি আটকে রাখার জন্য এই বাঁধটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁধের আগে ডান পাশে চোখে পড়বে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শত বছর পুরনো একটি মন্দির। যার নাম লবণাক্ষ কুণ্ড।
লতাপাতা ঢেকে যাওয়া মন্দিরের ভিতরটা একদমই ভূতুড়ে। এটা একটা পুরনো মন্দির। মন্দিরে দেওয়ালে নানান কারুকাজ। পরিত্যাক্ত এই স্থাপনা মনে করিয়ে দেয় এখান কার গৌরবময় সময়ের কথা যার সাক্ষী বহন করে দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরটি। সম্ভবত অনেক আগে এখানে বসতি ছিল। তবে এখন নেই।
যদি বর্ষায় যান তাহলে উপভোগ করতে পারবেন সেচ পকল্পের পানির স্রোত ধারা। প্রায় বিশ ফুট উচ্চতার বাঁধ। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখবেন সামনে বিশাল সমতল ভূমি, এটা পার হলেই ঝর্না।
সেচ প্রকল্পে বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে টইটুম্বুর থাকে এই স্থানটি, শীতের সময় পরিণত হয় গো-চারণ ভূমিতে। খুব কাছে হলেও বর্ষায় ঝর্নার কাছে পৌছানো আপনার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তার জন্য রয়েছে নৌকা, তবে বিকল্প পথও রয়েছে যা একটু বিপদজনকও বটে। শীতের সময় আপনি খুব সহযে তা পৌঁছাতে পারবেন।
সহস্রধারা ঝর্নাটির উচ্চতা প্রায় ত্রিশ মিটার। যাওয়ার পথে আপনার অন্য একটি ঝর্নার দেখা মিলতে পারে। এটি বেশির ভাগ সময় বর্ষাতে উপভোগ্য হয়। বিশাল পাথরের মাঝে এই ছোট ঝর্নাটির নাম জানা যায়নি, স্থানীয় কয়েক জনের সাথে কথা বলেও কিছু জানা যায়নি।
এই ছোট ঝর্ণাটি পার হয়েই সহস্র ধারা ঝর্না। যার যৌবনের রুপ উপভোগ করতে পারবেন বর্ষা কালে।
ঝর্নাটি মূলত একটি সরু এবং লম্বা ঝর্না। বর্ষা ছাড়া অন্য মৌসুমেই পানি প্রবাহ কম থাকে। শুধুমাত্র বর্ষাকালে এই ঝর্নার পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এটা খুব প্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে এটি তে যাওয়া সহজ এবং নিরিবিলি পরিবেশ। মনের মত করে কিছু সময় কাটানো যায়। প্রায় ত্রিশ মিটার উঁচু হওয়ার কারণে এটির জলরাশি খুব নান্দনিক।#