ট্র্যাভেলিং চট্টগ্রাম ডেস্ক:
রাষ্ট্রায়ত্ব বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশের বহরে যুক্ত হয়েছে বোয়িং এর তৈরি প্রথম ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’।
এই ড্রিমলাইনারে ভর করেই অন্য দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা এবং যাত্রীদের আরো উন্নত সেবা দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ।
১৯ আগস্ট বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল পেনফিল্ডের বোয়িং কারখানা থেকে সরাসারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উড়ে আসে আকাশবীণা।
বিমান বাংলাদেশের বহরের প্রথম ড্রিমলাইনারটিকে স্বাগত জানানো হয় ওয়াটার ক্যানন স্যালুট দিয়ে। এটিসহ বিমানের বহরে এখন উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৫টি।
১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পছন্দের নামাঙ্কিত ‘আকাশবীণা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ওইদিনই ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হবে বিমানটির প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা- কুয়ালালামপুর রুটে চলবে বিমানের ড্রিমলাইনারটি।
২০০৮ সালে বিমান নির্মাণকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং এর সাথে ২.১ বিলিয়ন ডলারে ১০টি নতুন বিমান কেনার চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ। ওই চুক্তির আওতায় ছয়টি বিমান ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে হরে।
বাকি চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানের মধ্যে আকাশবীণা প্রথম। বাকি ড্রিমলাইনারের মধ্যে একটি চলতি বছরের নভেম্বরে এবং শেষ দুটি আসবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ড্রিমলাইনার আকাশবীণা যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান নতুন মাইলফলকে যুক্ত হলো।
‘‘অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন উড়োজাহাজ বিমানকে সহায়তা করবে। যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমন ও বিমান মুনাফা বৃদ্ধিতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করবে।”
বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, ট্যাক্স ও চার্জ বাদে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২০০ মার্কিন ডলার এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া হবে ২৯০ মার্কিন ডলার।
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রীমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম।
আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। আর ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো।
বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য বিমানের তুলনায় উন্নত।
প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটিরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে এর ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। এছাড়া রয়েছে বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ভিডিও গেমস।
বিমানটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই)। বিমানের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন যুক্ত রয়েছে। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেক্ট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে।
কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।
অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।
ভ্রমণকালীন যাত্রীরা চাইলে আকাশে কেনাকাটাও করতে পারবেন। এই উড়োজাহাজে অলঙ্কার ও সুগন্ধিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায়। যাত্রীদের পছন্দমতো খাবারও থাকবে।
বিমানটির ককপিটে রয়েছে নতুনত্ব এটি একটি পেপারলেস এয়ারক্রাফট সেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন পাইলটরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি।
ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট, প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জন এবং কেবিন ক্রূরা।#
কনটেন্ট এডিটর